পশুর কাঁচা চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
স্থানীয় বাজারে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ঘটনায় নাখোশ হয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিছেন ট্যানারি মালিকরা। তবে পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
জানা যায়, ঈদুল আজহায় যারা কোরবানি দেন, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন পাইকার বা আড়তদারদের কাছে। সেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজটি সেরে বিক্রি করা হয় ট্যানারিতে।
এ সময়ই সবচেয়ে বেশি চামড়া সংগ্রহ করেন ট্যানারি মালিকরা। ন্যূনতম কোন দামে তারা সেই চামড়া কিনবেন তা ঈদের আগে ঠিক করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
কিন্তু সোমবার ঈদের বিকাল থেকেই চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার খবর আসতে থাকে। ফড়িয়া আর মৌসুমীরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নামমাত্র দামে চামড়া কিনেও পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে না পেরে শঙ্কিত হয়ে ওঠেন, কারণ সংগ্রহ করা চামড়া সংরক্ষণের নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা তাদের থাকে না।
অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ চামড়ার বাজার দিনাজপুরের রামনগরে কাঁচা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বাজারে ফেলে চলে যান মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) জানায়, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লাখখানেক পশুর চামড়া সড়কে ফেলে দিয়ে গেছেন, সেগুলো সরিয়ে এখন মাটিতে পুঁতে ফেলতে হচ্ছে।
আড়তদারদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করাৎ হয়, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা না পাওয়ায় অনেকেই চামড়া কিনতে পারেননি। ফলে বাজারে চামড়ার দাম পড়ে গেছে। উল্টোদিকে ট্যানারি মালিকরা অভিযোগ করছেন, আড়তদাররাই ‘সিন্ডিকেট করে’ মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের ঠকাচ্ছে।
এর মধ্যেই বিএনপির তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, কাঁচা চামড়ার দাম নামিয়ে দিয়ে ‘পাশের দেশে পাচার’ করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আর এর পেছনে রয়েছে ‘ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার সিন্ডিকেট’।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিবৃতিতে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চামড়া ক্রয়-বিক্রয় নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে।”
এদিকে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। সরকারের সিদ্ধান্তের পর মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় ট্যানারি মালিকরা জরুরি বৈঠক করেছেন। তারা বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের চামড়া শিল্পকে বিপদে ফেলবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত হবে অনেকটা আত্মঘাতী। কারণ, কোরবানি চামড়া দিয়েই মূলত আমাদের ব্যবসা করতে হয়। কোরবানির কাঁচা চামড়া যদি রফতানি হয়, তাহলে আমাদের শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো কি করবে? তিনি বলেন, আর আমরা তো এখনও চামড়া সংরক্ষণ করা শুরুই করিনি। আরও ৮ থেকে ১০ দিন পর আমরা চামড়া কেনা শুরু করবো। আর মধ্যস্বত্বভোগীদের তৈরি করা সমস্যা আমাদের ওপর কেন চাপানো হবে? আমরা তো সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই চামড়া কিনবো। আমরাতো কম দামে চামড়া নেবো না। তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়বে। এ নিয়ে ট্যানারি মালিকরা জরুরি বৈঠক করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে বুধবার (১৪ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলেও জানান বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক।
তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাঁচা চামড়া আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সেক্রেটারি হাজী মো. টিপু সুলতান বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানির জন্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটাকে আমরা স্বাগত জানায়। এর ফলে সরাসরি চামড়া রপ্তানি হবে। সেই সঙ্গে বৈধ পথে সরকারের আয় বাড়বে।
তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা আমাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করেনি। আগের টাকা আটকে রেখেছে। টাকার অভাবে আমরা কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে পারছি না। এ কারণে দাম পড়ে গেছে। তাই আমি বলবো সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এবার ঈদের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গতবছর কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার যে দাম সরকার ঠিক করে দিয়েছিল, এবারও সেটাই রাখা হয়েছে।
সে অনুযায়ী ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কেনার কথা ট্যানারি ব্যবসায়ীদের। আর খাসির কাঁচা চামড়া সারাদেশে ১৮-২০ এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকা দরে কেনাবেচা হওয়ার কথা।